ভেজাল ঘি বিক্রির প্রচারে বাবুর্চিরা!
ভেজাল ঘি বিক্রির প্রচারে বাবুর্চিরা!
সল্টগোলা ক্রসিং এলাকার বাসিন্দা হাজি ইকবালের মেয়ের বিয়ে ছিল গত ২০ অক্টোবর। বিয়ের রান্না করার জন্য ঠিক করেন আবুল বাবুর্চিকে। খাবারের আইটেম অনুযায়ী বাবুর্চি যেসব ভোগ্যপণ্যের তালিকা দেন, তার সবকিছুই পছন্দ হয় ইকবালের। তবে বাবুর্চির দেওয়া একটি প্রতিষ্ঠানের ঘি নিয়ে তিনি আপত্তি তোলেন। তবে অন্যসব পণ্য যে ব্র্যান্ডেরই হোক না কেন, ঘি কিনতে হবে বাবুর্চির দেওয়া তালিকা অনুযায়ীই। ঘি কেনা নিয়ে বাবুর্চির অতি আগ্রহে সন্দেহ হয় ইকবালের। বেশ কয়েকবার তর্কেও জড়ান তারা। উলি্লখিত ঘি না কিনলে রান্না করবেন না বলে জানিয়ে দেন আবুল। পরে নানা মাধ্যমে যোগাযোগ করে তিনি জানতে পারেন, ওই প্রতিষ্ঠানের ঘি ভেজাল উপাদান দিয়ে তৈরি এবং বাবুর্চিরা ওই ঘি কিনতে বাধ্য করেন। এসব জানার পর রান্নার কাজ থেকে আবুলকে বাদ দেন ইকবাল। তবে এ অবস্থা কেবল ইকবালের বেলায় নয়; বর্তমানে অনেকেই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত এমন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান দিয়ে তৈরি বিভিন্ন বেনামি কোম্পানির এসব ভেজাল ঘি বিক্রির একধরনের প্রচারে নেমেছেন চট্টগ্রামের নামিদামি বাবুর্চিরা। বিয়েসহ নানা অনুষ্ঠানের রান্নায় এসব ভেজাল ঘিয়ের নামই উল্লেখ করেন তারা। জানা গেছে, ভেজাল ঘি বিক্রি বাবদ প্রতিটি বিয়ের অনুষ্ঠানে কোম্পানি থেকে আর্থিক সুবিধা পান বাবুর্চিরা। যে কারণে তারা ভেজাল ঘি ছাড়া রান্নায় আগ্রহী হন না। এর সঙ্গে জড়িত বাবুর্চি ও কোম্পানির নাম উল্লেখ করে গত ২৫ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের কাছে একটি তালিকা জমা দিয়েছে চট্টগ্রামের ‘সচেতন জনতা’। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন সমকালকে বলেন, ‘ভেজাল ঘি তৈরির প্রতিষ্ঠান ও বাবুর্চিদের নামের একটি তালিকা পেয়েছি। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।’ জমা দেওয়া তালিকায় যেসব বাবুর্চির নাম রয়েছে, তারা হলেন_ মো. আবুল, ইকবাল, বাকের, জসিম মিয়া, সমরাজ, আলী হোসেন, মো. মনজুর, আবু তাহের, কাজী আবুল হোসেন, রাজু, সুমন, খালেকসহ অনেকে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাবি্বর রাহমান সানি বলেন, ‘ভেজাল ঘি প্রস্তুতকারকদের বিরুদ্ধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ ভুক্তভোগী হাজি ইকবাল সমকালকে বলেন, ‘মেয়ের বিয়ের রান্নার জন্য বাবুর্চি আবুলকে ঠিক করা হলেও নানাভাবে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, সে ভেজাল ঘি প্রস্তুতকারকদের এজেন্ট।’ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বিষয়টি উদ্বেগজনক। অসাধু ব্যবসায়ীদের তৈরি ভেজাল ঘি বিক্রি ও প্রচারে বাবুর্চিদের ভূমিকা খুবই ন্যক্কারজনক। জেলা প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে।’ জেলা প্রশাসক বরাবর দেওয়া ‘সচেতন জনতা’র তালিকায় উল্লেখ করা হয়, ভেজাল ঘিতে সয়লাব হয়ে গেছে পুরো চট্টগ্রাম শহর। প্রতিটি বাজারে চলছে এর রমরমা ব্যবসা। এর পেছনে রয়েছেন নগরীর নামকরা বাবুর্চিরা। প্রতিটি ভেজাল ঘিয়ের ক্যানের ভেতরে রয়েছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকার টোকেন। এর লোভেই বাবুর্চিরা এসব ঘি কিনতে বাধ্য করছেন। এ ছাড়া ভেজাল ঘি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান থেকেও তারা নির্দিষ্ট হারে কমিশন পান। এ ভেজাল ঘি খেয়ে সাধারণ মানুষ জন্ডিস, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি, লিভার, ডায়রিয়া, আমাশয়সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসকের কাছে দেওয়া তালিকায় উল্লেখ করে ‘সচেতন সমাজ’। গত ২১ সেপ্টেম্বর নগরীর বায়েজিদ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভেজাল ঘিসহ তিনজনকে আটক করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ২৬ জুন বাকলিয়া থানার চাক্তাই আমিন হাজি রোডের পোড়াভিটা এলাকায় প্রায় ৪০০ কৌটা ভেজাল ঘি জব্দ করা হয়। ২৫ জুন বায়েজিদ থানার চা বাগান রোডে অভিযান চালিয়ে পাওয়া যায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ক্যান ভেজাল ঘি, ২ হাজার ৫০০ পিস খালি ক্যানসহ মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান।
0 Comments