ভেজাল গুড় কারখানায় অভিযান

ভেজাল গুড় কারখানায় অভিযান

বস্তায় ভরে কারখানায় রাখা হয়েছে নিম্নমানের পাটালিগুড়। সেখান থেকে গুড়গুলো বের করে ময়লাযুক্ত পাকা মেঝেতে গুড়ো করা হচ্ছে। ঝোলাগুড় রাখা হয়েছে নোংরা পাতিলে। পাতিলের গুড়ে পাওয়া গেল মরা মাছি ও ময়লা আবর্জনা। পাশেই সেসব গুড় কার্টুনে প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য। নোংরা আবর্জনার দুর্গন্ধে বিষিয়ে উঠেছে পরিবেশ। – এমন চিত্র পাওয়া গেল একটি গুড় কারখানায়।

নাটোরের গুরুদাসপুর পৌরসভার চাঁচকৈড় পুরানপাড়া এলাকায় এমন চারটি ভেজাল গুড় উৎপাদনকারি করাখানায় অভিযান চালিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। পরে ভেজাল মিশ্রিত ১৪৫ লিটার ঝোলাগুড় নালায় ফেলে ধংস করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. ইয়াসমিন আক্তারের নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সহকারি পরিচালক ফারুক আহম্মেদ ও স্যানিটারি ইন্সপেক্টর মাধবচন্দ্র সরকারসহ স্থানীয় সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে ভেজাল গুড় কারখানা মালিক সুজন সোনার ও হাজী আসাদ সোনারকে ২০ হাজার টাকা করে এবং মুক্তার হোসেন ও হাজী বাদশা শাহকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমান আদালত। একই সঙ্গে তাদের ভেজাল ব্যবসা বন্ধ করতে সতর্ক করে। এসব ভেজালগুড়ের নমূনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত; ১৮ জানুয়ারী ‘বিপজ্জনক রাসায়নিকে তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়’ শিরোনামে ইত্তেফাকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই সংবাদের সূত্র ধরে এ অভিযান চালানো হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নাটোরের সহকারি পরিচালক ফারুক আহম্মেদ জানান, এসব কারখানার মালিকরা বাড়তি লাভের আশায় গুড়ে চিনিসহ নানা রকম রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে গুড় উৎপাদন করছে। কিন্তু ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআই ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন নেই। তাছাড়া রয়েছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। এটা ভোক্তা অধিকার আইনের পরিপন্থি। গুড়ে কী পরিমান ভেজাল রয়েছে তা পরীক্ষার জন্য  নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনা রিপোর্ট পেলেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন তারা ভেজাল গুড় তৈরির ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ভেজাল গুড় কারখানার চিত্র ছিল ভয়াবহ। প্রাথমিকভাবে তাদের নামমাত্র টাকা জরিমানা করে সতর্ক করা হয়েছে। এরপরও তারা সতর্ক না হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার ও গুড় তৈরির কারখানায় অভিযান অব্যাহত থাকবে।

স্থানীয়রা জানায়, বছরের পর বছর ধরে এই অসাধু ব্যবসায়ীরা ভেজাল গুড় উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। তারা বাজার থেকে নিম্নমানের নরম খেজুরগুড় ও ঝোলা গুড় কিনে থাকেন। পরে এসব গুড় কারখানায় জ্বাল দিয়ে তাতে চিনি, ভুট্টার গুড়া, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারির মিশ্রণ ঘটিয়ে ভেজাল গুড় তৈরি ও বাজারজাত করে আসছে। পুলিশ ও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে নির্বিঘ্নে তারা অবৈধ ব্যবসা চালাচ্ছে।

গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসক রবিউল করিম জানান খেজুর গুড়ে চিনি, রং, হাইড্রোজ, সোডা, ফিটকারিমত ভেজাল মিশ্রণের কারনে খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, কিডনী ড্যামেজ, লিভারে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।থাকে।

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

16 − one =

Back to top