দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিষ ও ভেজালমুক্ত পুষ্টিমানসম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব হলেও রাষ্ট্র তা পালনে ব্যর্থ হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ফুটপাত থেকে শুরু করে নামি দামি হোটেল রেস্টুরেন্টের কোনো পণ্যই ভেজালমুক্ত নয়। প্রয়োজনের তাগিদে জেনে বুঝেই সাধারণ জনগণ এসব খাবার খেতে বাধ্য হচ্ছে।

খাদ্যে ভেজাল মিশানোর অপরাধ হিসেবে ভারতে সাজা যাবজ্জীবন; চীনে মৃত্যুদণ্ড, পাকিস্তানে ২৫ বছরের কারাদণ্ড, যুক্তরাষ্ট্রে সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। আমাদের দেশে এ বিষয়ে আইন আছে, কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নাই।

বর্তমানে এমন কোনো খাদ্যদ্রব্য নেই যেখানে ফরমালিনসহ বিভিন্ন ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানো নেই। উৎপাদন থেকে শুরু করে বাজারজাতকরণ প্রত্যেকটি স্তরেই এর ছড়াছড়ি। সহজপ্রাপ্যতা, আইন প্রয়োগ ও যথাযথ নজরদারির অভাবে এসব ঘটেই চলেছে।

খাদ্য মানেই এখন কার্বাইড, ফরমালিন, হাইড্রোজ, ইথোপেনসহ নানা ক্ষতিকর রঙ ও রাসায়নিক বিষ। আর এসব খেয়ে মানুষের কিডনি ফেইলর, হার্টঅ্যাটাক, ক্যান্সারসহ নানা ধরনের রোগে  আক্রান্ত হচ্ছে। যা মানুষকে অকাল মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হচ্ছে।

কিডনি ফাউন্ডেশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের ১৬ ভাগ মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণের ফলে এ রোগ বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্যে ভেজাল ও দূষণ দেশে ক্যান্সার রোগীদের সংখ্যা বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল এবং সরকারি হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য মতে, বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ৪৫ লাখ মানুষ খাদ্যে বিষক্রিয়ার ফলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক গবেষণায় লিভার ও কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি হূদরোগে আক্রান্ত হওয়ার জন্য বিষাক্ত খাদ্যকে দায়ী করা হচ্ছে।

আইসিডিডিআরবির এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানী ঢাকার পথখাবারের ৫৫ শতাংশে নানা ধরনের জীবাণু রয়েছে। এসব জীবাণু খাবার বিক্রেতাদের ৮৮ শতাংশেরই হাতে থাকে।

সরেজমিন ভেজালবিরোধী অভিযানে দেখা গেছে, বিষাক্ত ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো হচ্ছে কলা, আনারস। ফরমালিন দেয়া হচ্ছে মাছ-সবজিতে। অস্বাস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। পোড়া মবিল দিয়ে ভাজা হচ্ছে চানাচুর, জিলাপি। টেক্সটাইল রং মিশিয়ে তৈরি করা হচ্ছে জুস, ক্ষতিকর রং ও ফ্লেভার মিশিয়ে হচ্ছে তেল, ঘি, আইসক্রিম, মিষ্টি, দই, ললিপপ, চকোলেট, কেক।

পরিবেশবিদ আবু নাসের খান বলেন, দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য বিষ ও ভেজালমুক্ত এবং পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু রাষ্ট্রকে আমরা এ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে দেখছি না।

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান বলেন, এক ধরনের অসাধু ব্যবসায়ী অতি মুনাফার লোভে ইফতারিসহ বিভিন্ন ফলে বিষ মিশিয়ে থাকে। রমজানে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিম্নমানের সেমাই প্রস্তুত করা হয়।