প্রশ্নফাঁস ও মেডিকেল ভর্তি কনফার্ম জনপ্রতি ২৫ লাখ টাকা

গত কয়েক বছরে প্রায় প্রতিবারই মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ উঠছে। ২০১৫ সালে এই প্রশ্নফাঁসকে কেন্দ্র করে ব্যাপক কেলেংকারি কাণ্ড বেধে গিয়েছিল। খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধেই ছিল অভিযোগের তীর। গত বছরও মেডিকেল ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। চলতি বছর ভর্তি পরীক্ষার দিন এ ধরনের অভিযোগ উঠলে মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম গুজবে কান না দেয়ার জন্য শিক্ষার্থীদের পরামর্শ দেন। তিনি একে মিথ্যা প্রচারণা বলে আখ্যায়িত করেন।
কিন্তু বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা, প্রশ্নফাঁসের সব অভিযোগই মিথ্যা নয়। প্রশ্নফাঁস এবং ভর্তিকে কেন্দ্র করে এ বছর অত্যন্ত হাই প্রোফাইলের ব্যবসা হয়েছে। র‌্যাব সদস্যরা ইতিমধ্যে যাদেরকে ধরেছেন তারা প্রকৃত ফাঁসকারী নয় বলে র‌্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে। এরা মূলত প্রতারক। প্রকৃত প্রশ্ন ফাঁসকারীদের র‌্যাব ধরতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বিভাগেরই একজন সদস্য যিনি ঢাকার পার্শ্বের একটি থানায় কর্মরত আছেন। এই পুলিশ সদস্য তার মেয়েকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এরজন্য তাকে ২৫ লাখ টাকা খরচ করতে হয়েছে। এরমধ্যে ৫ লাখ টাকা ভর্তির আগের রাতে প্রশ্ন সরবরাহ বাবদ। বাকি ২০ লাখ টাকা ভর্তি কনফার্ম করা বাবদ। কীভাবে টাকার লেনদেন হয়েছে এবং কীভাবে ভর্তি কনফার্ম হয়েছে সেই কাহিনী এই পুলিশ সদস্য নিজেই অন্য একজন ঘনিষ্ঠ ব্যক্তির কাছে গত ১২ অক্টোবর মোবাইল ফোনে স্বীকার করেছেন।
জানা গেছে, ওই পুলিশ সদস্যের মেয়ে লেখাপড়ায় ততটা মেধাবী নয়। কিন্তু তার ইচ্ছা, মেয়েকে সরকারি মেডিকেল কলেজে পড়াবেন। তাই আগে থেকেই লাইন খুঁজতে থাকেন। পেয়েও যান। কন্ট্রাক্ট হয়, ৫ লাখ টাকা নগদ দিতে হবে প্রশ্নপত্র সরবরাহ বাবদ। ৬ অক্টোবর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তার আগের রাতে অর্থাৎ ৫ অক্টোবর রাতে ৫ লাখ টাকা লেনদেনের বিপরীতে প্রশ্নপত্র হাতে পান। কিন্তু, প্রশ্নপত্র পেলেও মেয়ে সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির নম্বর পাবে কিনা, এ নিয়ে সন্দেহ ছিল। তাই ভর্তি কনফার্মের কন্ট্রাক্টেও যেতো হলো তাকে। যে লাইন তিনি ধরেছিলেন এরা খুব ক্ষমতাবান। সবই তারা পারে। পুলিশ সদস্যের ইচ্ছা, মেয়েকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়াবেন। নিজের বাড়ি টাঙ্গাইল।
অবশেষে তার সেই স্বপ্নও পূরণ হলো। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তি কনফার্ম করতে আরো ২০ লাখ টাকা দিতে হয়েছে বলে তিনি ওই ঘনিষ্ঠজনকে জানিয়েছেন।
পুলিশ সদস্য তার ঘনিষ্ঠজনকে আরো জানিয়েছেন, যে ‘লাইন’ তিনি ধরেছিলেন তাদেরকে নির্দিষ্টসংখ্যক প্রার্থী অত্যন্ত গোপনে যোগাড় করার টার্গেট দেয়া হয়েছিল। এই ‘লাইন’টি খুব হাই প্রোফাইলের। এরা পরীক্ষার ফলাফলও ম্যানিপুলেট করার ক্ষমতা রাখে এবং সেটি তারা করেছেও। খুবই টপ সিক্রেটে এই কাজগুলো করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০১৫ সালে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস ধরা পড়ার পর সেই থেকে সুপরিকল্পিতভাবে অতি সতর্কতার সঙ্গে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। ওই বছর ভর্তি কেলেংকারি নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় হয়। তুমুল আন্দোলন, মিছিল-সমাবেশ হয়। বিশিষ্ট নাগরিকদের নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি সেই পরীক্ষা বাতিল করে নতুনভাবে পরীক্ষা নেয়ার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু মন্ত্রণালয় তা শোনেনি। মন্ত্রণালয় অন্যভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, আন্দোলনে যারা নেতৃত্বে ছিল তাদেরকে বিশেষ ব্যবস্থায় অত্যন্ত গোপনে ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

5 × 2 =

Back to top