মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে অভিযান চিকিৎসার নামে মারধর

ওষুধ দেওয়া হতো মানসিক রোগের। কিন্তু চিকিৎসা চালানো হতো মাদকাসক্তির। এখানেই শেষ নয়, রোগীদের হাতকড়া পরিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। এভাবে চিকিৎসা চলত রাজধানীর দক্ষিণখান চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থিত ইউটার্ন মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে। বিনিময়ে রোগীদের স্বজনদের কাছ থেকে আদায় করা হতো মোটা অঙ্কের অর্থ। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিংবা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অনুমোদন ছিল না প্রতিষ্ঠানটির।গতকাল সোমবার দুপুরে এই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে অভিযান চালিয়ে ১৭ জন রোগীকে উদ্ধার করেন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ভ্রাম্যমাণ আদালত। র্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলমের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানের সময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক দেওয়ান মো. মেহেদি উপস্থিত ছিলেন। অভিযান শেষে নিরাময় কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির মালিক গিয়াসউদ্দিনকে নয় মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা এবং এর ব্যবস্থাপক মো. নাসিরকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম প্রথম আলোকে বলেন, এই নিরাময় কেন্দ্রের নিজস্ব কোনো চিকিৎসক নেই। বাইরের এক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ প্রতি মাসে একবার করে এখানে আসতেন। চিকিৎসার নামে রোগীদের হাতকড়া পরিয়ে লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হতো। ইউটার্নের ব্যবস্থাপক নাসির নিজেই এ কাজটি করতেন।র্যাব সূত্রে জানা গেছে, ভবনটির চার ও পাঁচতলা ভাড়া নিয়ে তিন বছর আগে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র স্থাপন করেন গিয়াসউদ্দিন। দালালদের মাধ্যমে বাইরে থেকে রোগী এনে এখানে ভর্তি করানো হতো। পাঁচতলার একটি কক্ষে রোগীদের থাকতে দেওয়া হতো। কক্ষ ও শৌচাগার সবকিছু তাঁরাই পরিষ্কার করতেন। একেক জন রোগীর কাছ থেকে প্রতি মাসে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করতেন মালিক গিয়াসউদ্দিন।এ ব্যাপারে ম্যাজিস্ট্রেট সারওয়ার আলম বলেন, ভুক্তভোগী তিনজনের কাছ থেকে এ ধরনের অভিযোগ পেয়ে এখানে অভিযান চালানো হয়। মারধর করে রোগীদের মানসিক রোগের ওষুধ দেওয়া হতো। রোগীরা অসুস্থ হয়ে গেলে তাঁদের পরিবারের সদস্যদের খবর দিত ইউটার্ন কর্তৃপক্ষ। সাক্ষাতের জন্য আÍীয়স্বজন এলে রোগীর অসুস্থতার কথা বলে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করা হতো। বেশ কয়েকজন রোগী পাওয়া গেছে, যাঁরা পারিবারিক ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। পরে উদ্ধার হওয়া রোগীদের উত্তরার র্যাব সদর দপ্তর নিয়ে তাঁদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

0 Comments

There are no comments yet

Leave a comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

one × three =

Back to top